বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ন
গত কোরবানির ঈদে ব্যাংকগুলো চামড়া ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছিল, সেই ঋণের বড় অংশই আদায় হয়নি। আগের নেওয়া ঋণও বিভিন্ন অজুহাতে ফেরত দিচ্ছেন না তাঁরা। এখন কোরবানি ঈদে আগের ঋণ শোধ না করেই তা ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর, ২০১৭ থেকে ২০১৯ তিন বছরের সুদ মওকুফ, অনারোপিত, স্থগিত ও দণ্ড সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ, দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পরিশোধে নমনীয় সময়সূচি নির্ধারণ এবং ৩ শতাংশ সুদে ৫০০-৬০০ কোটি টাকার ক্যাশ ক্রেডিটসহ একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
এরই মধ্যে এ খাতে আবারও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরও খুশি নন চামড়া ব্যবসায়ীরা। বরং দাবি অনুযায়ী সব সুবিধা নিতে তৎপর তাঁরা। এদিকে চামড়া কিনতে এবার রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক ৬০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। শুধু নিয়মিত গ্রাহকদেরই এই ঋণ দেওয়া হবে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল সুবিধা দিলেও তা তেমন কাজে আসবে না। কারণ আগের ঋণের ২ শতাংশ এককালীন পরিশোধ করে পুনঃ তফসিলের সামর্থ্য নেই অনেকের। তাই আগের ঋণ ব্লক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর, বিগত তিন বছরের সুদ মওকুফ এবং ৩ শতাংশ সুদে ৫০০-৬০০ কোটি টাকার ক্যাশ ক্রেডিটের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের থেকে চামড়া কিনতে অর্থসংকটে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকার থেকে ভর্তুকি দিলেই শুধু এ খাতে সুদ মওকুফ ও ৩ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।
জানা যায়, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক সুবিধা আদায় করছেন ট্যানারি মালিকরা। সাভারে চামড়া শিল্প নগরী নির্মাণ প্রকল্পের পুরো ব্যয়ই বহন করেছে সরকার। অবকাঠামো ও মেশিনারিজ স্থাপনে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের ক্ষতিপূরণ কয়েক শ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। শিল্পনগরীতে স্থাপিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপনের টাকাও দিয়েছে সরকার। আবার হাজারীবাগের তুলনায় সাভারে ট্যানারি মালিকদের কয়েক গুণ বেশি জমি দিয়ে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে এ খাত ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা পেয়ে আসছে। এ ছাড়া নিজস্ব ইটিপিতে উৎপাদিত ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা পেয়ে আসছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকেই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে চামড়াশিল্প। এ কারণে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্প নগরী স্থানান্তর করা হয়। প্লট বরাদ্দের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও এখনো কোনো কোনো ইউনিটে অবকাঠামোই তৈরি হয়নি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেননি ট্যানারি মালিকরা। এ কারণে ব্যাংকের টাকাও ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি। মহামারি করোনার কারণে এখন আবার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে এ খাত। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় আমাদের গত বছরের কেনা চামড়ার প্রায় ৪০ শতাংশ পড়ে আছে।’
প্রতিবছর কোরবানির আগে চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকে সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। তবে এবার ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণের কারণে নিজেরাই সমস্যায় রয়েছে। এ ছাড়া এ খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই খেলাপি হয়ে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮৭ কোটি টাকা। যা এ খাতে বিতরণ করা ঋণের প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ। একক খাত হিসেবে বর্তমানে চামড়া খাতে খেলাপির হারই বেশি। আবার খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের। এর পরও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক চামড়া ব্যবসায়ীদের নতুন করে এবার প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মো. শামস উল ইসলাম বলেন, ‘গতবার আমরা চামড়া ব্যবসায়ীদের ১৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিলাম। এবারও গতবারের সমপরিমাণ ঋণ দেওয়ার টার্গেট নিয়েছি। তবে আমরা শুধু নিয়মিত গ্রাহককেই ঋণ দেব।’